|অনলাইন ডেস্ক
⚡ ৫ মিনিটে পড়ুন
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ঘোষণার সাথে সাথেই ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিভাজনের সুর শোনা যাচ্ছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরে শীর্ষ পদ নিয়ে অনাস্থা ও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। আহ্বায়ক পদ নিয়ে কোনো দ্বিমত না থাকলেও সদস্য সচিব পদ নিয়ে একাধিক ব্যক্তির দাবি রয়েছে। এরা সকলেই গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, শুরু থেকেই এমন বিভাজন সংগঠনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমিয়ে দেবে, যা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পথে বাধা সৃষ্টি করবে। এই সমস্যা সমাধানে আজ নাগরিক কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন:শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে প্রতিবেশীর লাঠির আঘাতে প্রাণ হারালেন জামাই
২৪শে ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম আহ্বায়কের দায়িত্ব নেবেন। তিনি বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন দলের দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। নাহিদ ইসলামের বিষয়ে সবাই একমত হলেও সদস্য সচিব পদ নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ চাইছে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে এই পদে দেখতে, যিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব। অন্যদিকে, আরেক পক্ষ চাইছে আন্দোলনের অন্যতম নেতা আলী আহসান জুনায়েদকে এই পদে দেখতে, যিনি নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও এই পদে আরও দুজন দাবিদার রয়েছেন— নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। আখতার ও জুনায়েদের মধ্যে কেউ এই পদে না আসলে তাদের নাম বিবেচনায় রাখা হবে। তবে আখতার ও জুনায়েদ দুজনকেই এই পদে না চাওয়ার একটি অংশও রয়েছে, যারা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে এই পদে দেখতে চান। এছাড়াও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের অনুসারীরা চান এই পদে মাহফুজের বড় ভাই ও সাবেক ছাত্রদল নেতা মাহবুব আলম মাহিরকে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুরু থেকেই এমন অনাস্থা ও বিভাজন তৃণমূল পর্যায়ে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। নতুন দলের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়া উচিত, কিন্তু কেউ কেউ মনে করছেন যে শুধু তারাই এই পদের জন্য যোগ্য, যা সঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি করতে এসে পদ নিয়ে এভাবে দ্বন্দ্বে জড়ানো কোনো সংগঠনের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।
আরও পড়ুন: নৌকার ছিদ্র নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নেতা বলেন, কিছু মানুষ শীর্ষ চার পদের মধ্যে দুটিই দখল করতে চাইছে। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। আমরা শুরু থেকেই সংগঠনকে বিতর্কিত করতে চাই না।
অন্যদিকে, আরেক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংগঠনে আমাদের অবদান অনেক। আমাদের অনুসারীও অনেক রয়েছেন। যদি নির্বাচন হয়, তবে আমাদের লোকই জিতবে। কিন্তু নির্দিষ্ট কাউকে সরাসরি মনোনীত করার বিরোধিতা করছি আমরা।
এদিকে, গত রাত থেকে আখতার ও জুনায়েদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। কেউ লিখছেন আখতার হোসেনকেই তারা নেতা মানেন, অন্য কাউকে নয়। কেউ প্রশ্ন তুলছেন, আখতারকে বাদ দিতে চায় কে? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ লিখেছেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিতে তার আগমন আখতার হোসেনের হাত ধরেই। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা সবসময় তাকে মুগ্ধ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিনি এককভাবে লড়াই করেছেন, বারবার হামলার শিকার হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, কিন্তু কখনও সঙ্গীদের ছেড়ে যাননি। তিনি সচেতন নাগরিক হিসেবে আখতার হোসেনের পাশে আছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সানজানা আফিফা অদিতি ফেসবুকে লিখেছেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সংগঠনের প্রধান পদগুলোতে কারা দায়িত্ব পাবেন তা সংগঠনের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে। প্রথম দশজনের সিদ্ধান্ত মানুষের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। আগের মতো যদি এক বা দুই ব্যক্তি সব সিদ্ধান্ত নেন, তবে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সাথে তার যাত্রা দীর্ঘায়িত হবে না।
নিউজ সোর্স: মানবজমিন
