
দালালের প্রতারণায় রাশিয়ার যুদ্ধে শালা-দুলাভাই, একজন নিহত, অন্যজন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার নন্দীগ্রামের রহমত আলী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে লড়াই করছেন, আর নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ুন কবির ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। প্রিয়জনদের ফিরে পেতে এখন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তাদের স্বজনরা।
বিদেশে ভালো কাজের আশায় রহমত আলী ও হুমায়ুন সৌদি আরব হয়ে রাশিয়ায় পাড়ি জমান দালালের মাধ্যমে। সেখানে যাওয়ার পর প্রতিশ্রুত চাকরির পরিবর্তে তারা সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া হয়।
যুদ্ধের ময়দানে ড্রোন হামলায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান হুমায়ুন। আর গুরুতর আহত রহমত এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। রহমতের তিন বছরের মেয়ে ও হুমায়ুনের এক বছরের শিশু এখন বাবাকে হারিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে।
রহমতের স্ত্রী যমুনা বেগম জানান, গত বছরের ১৮ অক্টোবর তার স্বামী ও একমাত্র ভাই হুমায়ুন বিদেশ যান। সৌদি পৌঁছে দালালের কথায় ওমরা পালন করেন, এরপর ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ তারা রাশিয়ায় যান। সেখানে পৌঁছানোর পরপরই তাদের সেনা ক্যাম্পে পাঠানো হয় এবং ২২ দিনের প্রশিক্ষণের পর যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, তার স্বামী একবার ফোনে জানায়, তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং দালালদের দ্বারা রাশিয়ার কাছে বিক্রি হয়ে গেছেন। প্রচণ্ড ঠান্ডায় যুদ্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন, আর সামনে ড্রোন হামলায় হুমায়ুনের মৃত্যু হয়।
এদিকে নিহত হুমায়ুনের স্ত্রী তারা খাতুন সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন অন্তত স্বামীর মরদেহ যেন দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। একইসঙ্গে তিনি প্রতারক দালালদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
রহমতের পরিবারও গভীর শোকে নিমজ্জিত। তার বৃদ্ধ মা-বাবা এবং ভাই-বোনেরা এই দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। রহমত ২০০২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কুয়েতে ছিলেন, তবে করোনার পর আর বিদেশে যেতে পারেননি। পরে শ্বশুরবাড়ির পরামর্শে শালা-দুলাভাই একসঙ্গে রাশিয়া যান, যা শেষ পর্যন্ত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে।
এ ঘটনায় সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজাহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিহতের পরিবারকে সরকার থেকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে এবং লাশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন কাজ করছে। একইসঙ্গে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ফয়সাল কবির শুভ জানান, এ ধরনের যুদ্ধক্ষেত্রে মাত্র ২০-২২ দিনে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে যুদ্ধ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য, অথচ কিছু অসাধু দালাল সহজ সরল মানুষদের প্রতারণার মাধ্যমে সেখানে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে নিহতের পরিবার স্বজনদের মরদেহ ফিরে পেতে এবং আহতদের দেশে ফেরাতে সরকারের সর্বোচ্চ সহায়তা কামনা করেছে।