Type Here to Get Search Results !

ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা বিদেশিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ছিলেন বাংলাদেশি।

ছবি: সংগৃহীত


 বাংলাদেশের অনেক নাগরিক ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা এবং প্রজননস্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। তবে প্রতিবছর ঠিক কতজন বাংলাদেশি ভারতে চিকিৎসা নিতে যান, তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান বাংলাদেশ সরকারের কাছে নেই।


ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ৪৮% বেড়েছে। এ সময় ভারতে আসা মোট চিকিৎসা পর্যটকদের প্রায় ৭০% ছিলেন বাংলাদেশি। ২০২৩ সালেও এই প্রবণতা অব্যাহত ছিল।


একটি প্রাক্কলিত হিসাবে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া মোট বিদেশি রোগীর মধ্যে ৭০% এর বেশি ছিলেন বাংলাদেশি। মাত্র ছয় বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।


২০১৭ সালে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৪,৯৪,৭৬৫ জন, যার মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ২,২১,৬৯৪ জন (৪৪.৮%)। ২০২২ সালে মোট চিকিৎসা পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কমে ৪,৭৪,৬৮১ জন হয়, কিন্তু বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩,২৭,০৫৫ জনে দাঁড়ায়, যা মোট বিদেশি চিকিৎসা পর্যটকের ৬৯%।

২০২৩ সালে এই সংখ্যা আরও বেড়ে ৬,৩৫,০০০ জন হয়, যার মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৪,৪৯,৫৭০ জন (৭০.৮%)।



কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই চিত্র পুরোপুরি বদলে যায়। কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণে ভারতে বাংলাদেশিদের ভিসা কার্যক্রম সীমিত হয়ে আসে। চিকিৎসা ভিসা চালু থাকলেও খুব কমসংখ্যক মানুষ তা পাচ্ছেন। ফলে অনেক বাংলাদেশি ভারত বাদ দিয়ে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন।


এর ফলে ভারতের চিকিৎসা পর্যটন খাতে বড় ধস নামে। ভারত এখন বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন পর্যটক আকর্ষণের চেষ্টা করছে। ২০২২ সালে ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয় ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড রোডম্যাপ ফর মেডিকেল অ্যান্ড ওয়েলনেস ট্যুরিজম’ নামে একটি পরিকল্পনা নেয়, যেখানে বাংলাদেশি রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।


বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের চিকিৎসা পর্যটন খাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা দেশ ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যায় এবং বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে ওঠে। স্থল সীমান্ত বন্ধ থাকায় ভারতে যাওয়া-আসা বন্ধ হয়ে যায় এবং ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রগুলোও কার্যক্রম স্থগিত করে।


এই সংকটের ফলে ভারতের হাসপাতাল, হোটেল, রেস্তোরাঁ, বিপণিবিতান ও ওষুধের দোকানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের এমভিটি (মেডিকেল ভিসিট ট্যুরিজম) খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ বাংলাদেশি রোগীদের জন্য এই অঞ্চল ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়।


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার অভাব, সেবার নিম্নমান, ডাক্তারদের রোগীদের পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া, এবং রোগীবান্ধব পরিবেশের অভাবের কারণে মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে। এখানে সঠিক সেবা পেতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অন্যদিকে, বিদেশে এক জায়গায় সব সেবা সহজে পাওয়া যায়, তাই মানুষ বিদেশমুখী হচ্ছে।’


তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডের ডাক্তাররা রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দেন, যদিও তারা বেশি ফি নেন। কিন্তু বাংলাদেশে সে ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে, বিদেশি হাসপাতালগুলো বাংলাদেশি রোগীদের মনস্তত্ত্ব ভালোভাবে বুঝে সেবা দেয়, যা তাদের আকৃষ্ট করে।’


ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক টানাপোড়েনের ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দুই দেশের মানুষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমনকি ভারতীয় হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীদের ভর্তি না করার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণার কথাও শোনা যায়।


এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলে রোগীরা ভারতে যাবেন, না হলে যাবেন না। যদি ভারতীয় হাসপাতাল ও হোটেলগুলো বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বা বৈষম্যের শিকার হতে হয়, তাহলে রোগীরা অন্য দেশে চিকিৎসার জন্য চলে যাবেন।’


বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে মানুষের আস্থা ফেরানোর জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান কোনো মন্তব্য করেননি।


------------------------------------

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.