ছবি: সংগৃহীত
রোজা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন, "তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস তথা রমজান মাস পাবে, তারা যেন রোজা রাখে।" (সুরা বাকারা: ৮৪)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সকল মুমিনের জন্য রোজা রাখা ফরজ। তবে রোজা ফরজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, যেমন— প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া, বুদ্ধিমান হওয়া ও স্থায়ীভাবে বাসায় থাকা। যদিও এসব শর্ত পূরণ হলে রোজা রাখা আবশ্যক, তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ইসলামে শিথিলতা দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, "তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে, সে অন্য কোনো দিন রোজার সংখ্যা পূর্ণ করবে।" (সুরা বাকারা: ৮৪)
অসুস্থতা ও রোজার ছাড়
আয়াতে উল্লেখিত "অসুস্থতা" ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে নারীদের মাসিক ও সন্তান জন্মের পরবর্তী সময়ও অন্তর্ভুক্ত।
গর্ভবতী নারীরা যদি মনে করেন যে রোজা রাখলে তারা বা তাদের অনাগত সন্তানের ক্ষতি হতে পারে, তবে কোনো অভিজ্ঞ ধার্মিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারা রোজা ভাঙতে পারেন। তবে পরবর্তীতে সেই রোজাগুলো কাজা করতে হবে।
তেমনি, যে নারীরা দুধপান করাচ্ছেন, যদি রোজার কারণে তারা দুর্বল হয়ে পড়েন, তাহলে তাদেরও রোজা ভাঙার অনুমতি আছে। তবে সুস্থ হলে কাজা করতে হবে, কাফফারা দেওয়া লাগবে না।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য রোজার বিষয়ে করণীয়
গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভবতী মায়ের রোজা রাখার কারণে শিশুর দৈর্ঘ্য বা ওজনে তেমন পরিবর্তন হয় না। তবে কোনো মায়ের শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
রোজা না রাখার অনুমতি আছে যেসব ক্ষেত্রে—
১. অতিরিক্ত বমি হওয়া, যা শরীরের পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে।
2. শরীরে লবণের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
3. গর্ভের শিশুর ওজন কমে যাওয়া।
4. উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া।
এ ছাড়া অন্যান্য জটিল শারীরিক সমস্যাও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
গর্ভবতী মায়েদের রোজার শিথিলতা নিয়ে হাদিস
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
"আল্লাহ তাআলা মুসাফির ব্যক্তির জন্য রোজা ও নামাজ কমিয়ে দিয়েছেন এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদায়িনী নারীদের রোজার বিধান শিথিল করেছেন।" (তিরমিজি: ৭১৫)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন—
"গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী নারী রোজা ভাঙতে পারেন। তবে পরবর্তীতে কাজা করে নিতে হবে, ফিদিয়া দেওয়া লাগবে না।" (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ৭৫৬৪)
সুস্থ থাকার জন্য কিছু সতর্কতা
যেসব গর্ভবতী মা রোজা রাখতে চান, তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ—
✅ ক্লান্তি কমাতে বেশি বিশ্রাম নেওয়া।
✅ দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করা।
✅ অতিরিক্ত কাজ বা ভারী বস্তু বহন না করা।
✅ ভাজাপোড়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করা।
✅ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে চিনিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা।
✅ সাহরিতে ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, যেন দীর্ঘক্ষণ শক্তি পাওয়া যায়।
✅ ইফতারের পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
✅ পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা।
গর্ভবতী মায়েদের উচিত নিজেদের ও অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকা। যদি কোনো অসুবিধা দেখা দেয়, তবে ইসলামের অনুমতি নিয়ে পরে কাজা করার সুযোগ রয়েছে।
%20(1).png)