ছবি: সংগৃহীত
এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) দেশের হাটবাজার, সড়ক, কালভার্ট, ড্রেন এবং ছোট-বড় সেতুর মতো গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করে আসছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সংস্থাটি ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে। এবার এলজিইডির কর্মকর্তারা বিদেশ গিয়ে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিতে চান এবং এজন্য অগ্রিম অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন।
সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে বিদেশ ভ্রমণের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে সরকারি অর্থায়নে বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই এমন দাবি ঘিরে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, আর পরিকল্পনা কমিশনও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
প্রকল্পের মাধ্যমে মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজার, সড়ক, কালভার্ট এবং সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ‘মানিকগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত চলবে। পুরো প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে এলজিইডি।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন, পণ্য পরিবহন সহজতর করা, গ্রামীণ জনগণের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এজন্য ৪২৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করার পাশাপাশি, হাটবাজার ও শিল্প এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তবে, প্রকল্প প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২ কোটি টাকা বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ রাখা ছাড়াও প্রকল্পে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমন, চালকের ব্যবস্থা না রেখেই বাড়তি গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ, আপ্যায়ন, পরামর্শক নিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক খরচের দাবি তোলা হয়েছে।
খরচের বিবরণ অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় দুটি জিপ, সাতটি ডাবল কেবিন পিকআপ এবং ১১টি মোটরসাইকেলসহ ২০টি যানবাহন কেনার জন্য ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, অথচ পর্যাপ্ত চালকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এছাড়া, পরামর্শকদের জন্য ৩ কোটি ৮৪ লাখ, প্রচার বিজ্ঞাপনের জন্য ৭৮ লাখ, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্য ৬০ লাখ, আপ্যায়নের জন্য ২০ লাখ, গ্যাস ও জ্বালানির জন্য ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দের দাবি করা হয়েছে। আউটসোর্সিং স্টাফের জন্য ৭ কোটি, আসবাবপত্রের জন্য ১২ লাখ, সড়ক নিরাপত্তার জন্য ২ কোটি, পরিবেশগত ব্যয়ের জন্য ৪ কোটি ২৭ লাখ এবং পুনর্বাসন খাতে ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।
এই ব্যয় প্রস্তাবনাগুলো পরিকল্পনা কমিশনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কমিশন মনে করছে, প্রকল্পের অনেক খাতে অযৌক্তিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় এসব খরচ যাচাই-বাছাই করা হবে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান জানান, সরকারি অর্থায়নে বিদেশ প্রশিক্ষণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এটি অনুমোদনের সুযোগ নেই। পিইসি সভায় বিদেশ সফর ও অতিরিক্ত ব্যয় সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাতিল করার সুপারিশ করা হবে। সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
