Type Here to Get Search Results !

এক মুসলিম দেশ নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

ছবি: সংগৃহীত


কিরগিজস্তানে নিকাব নিষিদ্ধ: ধর্মীয় স্বাধীনতা নাকি নিরাপত্তার প্রশ্ন?

মধ্য এশিয়ার মুসলিমপ্রধান দেশ কিরগিজস্তানে জনসমাগমস্থলে নিকাব পরা আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশটির সংসদে গৃহীত নতুন আইনের আওতায়, কেউ প্রকাশ্যে নিকাব পরলে তাকে ২৩০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি প্রায় ২৭,৬০০ টাকা) জরিমানা গুনতে হবে।

এই নিষেধাজ্ঞা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়া নিশ্চিত করেছে।


কেন নিষিদ্ধ হলো নিকাব?

সরকারি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইনপ্রণেতাদের মতে, নিকাব পরার ফলে মুখমণ্ডল সম্পূর্ণ ঢাকা থাকে, যা জনসমাগমস্থলে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা কঠিন করে তোলে। তাই তারা চান, সবাই জনসমক্ষে চেহারা প্রকাশ করুক এবং সহজে শনাক্তযোগ্য হোক


সংসদ স্পিকার নুরলানবেক শাকিয়েভ বলেন,

"এই আইন কিরগিজ সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রতিরোধে সহায়ক হবে। তবে, শুধুমাত্র নিকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে, হিজাব বা মাথার স্কার্ফ পরার অনুমতি থাকছে, কারণ এটি মুখ ঢেকে রাখে না।"

তিনি আরও বলেন,

"আমাদের মায়েরা ও বোনেরা ঐতিহ্যগতভাবেই মাথার স্কার্ফ পরেন, যা আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের অংশ। তাই হিজাবের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।"

 

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া

এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে। বিরোধীদের মতে, এটি নারীদের পোশাক নির্বাচনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর সরকারের অযাচিত নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দিচ্ছে।

নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন,

"গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নারীদের নিজের ইচ্ছামতো পোশাক পরার অধিকার থাকা উচিত। এই নিষেধাজ্ঞা সেই স্বাধীনতার ওপর আঘাত হেনেছে।"

একজন নিকাব পরিহিত নারী, যিনি ছয় বছর ধরে এটি ব্যবহার করছেন, জানান,

"আমি ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছি। বাইরে গেলে মুখ ঢাকতে মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করছি।"

 

নিকাব নিষিদ্ধের বিতর্ক ও পটভূমি

নিকাব নিয়ে কিরগিজস্তানে বিতর্ক নতুন নয়। ২০১৪ সালে দেশটিতে ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’ নামে একটি সরকারি প্রচারণা চালানো হয়, যেখানে নিকাব ও ইসলামি পোশাককে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়


২০২৩ সালে সংসদ সদস্য শরাপাতকান মাজিতোভা দক্ষিণাঞ্চলীয় ওশ শহর সফরের পর নতুন করে নিকাব নিষিদ্ধের দাবি তোলেন। তিনি জানান,

"প্রতি চারজন নারীর একজন নিকাব পরছে, এবং এর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।"

তিনি আরও বলেন,

"নিকাবের পাশাপাশি লম্বা দাড়িও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। তাই সরকারকে এগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত।"

 

মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশে ইসলামি পোশাকের অবস্থা

কিরগিজস্তানের মতো মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ইসলামি পোশাকের ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে—


তাজিকিস্তান: সরকারি প্রচারণার মাধ্যমে নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরতে উৎসাহিত করা হয়; হিজাব নিষিদ্ধ।
উজবেকিস্তান: সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল ও অফিসে হিজাব নিষিদ্ধ।
কাজাখস্তান: সরকারি ভবনে হিজাব নিষিদ্ধ, তবে সাধারণ জনগণের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নেই।
তুর্কমেনিস্তান: হিজাব নিষিদ্ধ নয়, তবে কর্মস্থলে ঐতিহ্যবাহী পোশাক বাধ্যতামূলক।


এমনকি কিছু দেশে পুলিশ জোরপূর্বক পুরুষদের দাড়ি কাটার ঘটনাও ঘটিয়েছে


নিকাব নিষিদ্ধের ভবিষ্যৎ প্রভাব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত কিরগিজস্তানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে। সরকার একে নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে দাবি করলেও, সমালোচকরা বলছেন এটি নারীদের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ


এছাড়া, এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কিরগিজস্তান মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো ইসলামি পোশাকের ওপর কঠোর নীতি গ্রহণের পথে এগোচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


উল্লেখ্য: কিরগিজস্তান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ইসলামি সংস্কৃতির প্রভাব থাকলেও দেশটির সংবিধান ধর্ম ও রাষ্ট্রকে পৃথক রেখেছে এবং সব ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছে



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.